বেবিচকের রাজস্ব প্রবৃদ্ধি ৬৮%, ল্যান্ডিং-পার্কিংয়ে আয় প্রায় হাজার কোটি টাকা

Passenger Voice    |    ১২:০৬ পিএম, ২০২৪-০২-২৮


বেবিচকের রাজস্ব প্রবৃদ্ধি ৬৮%, ল্যান্ডিং-পার্কিংয়ে আয় প্রায় হাজার কোটি টাকা

চলতি বছরের অক্টোবরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল-৩ বাণিজ্যিকভাবে চালুর লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। সংস্থাটির কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন টার্মিনাল দেশের আকাশ পরিবহন খাতে নবদিগন্তের সূচনা করবে। বাড়বে উড়োজাহাজ ও যাত্রী চলাচল। ফলে রাজস্ব আয়ও বাড়বে। যদিও টার্মিনাল-৩ চালুর আগেই গত অর্থবছরে বেবিচকের আয়ে বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি হয়েছে। প্রবৃদ্ধির হার ৬৮ শতাংশের বেশি। সংস্থাটির ২০২২-২৩ অর্থবছরের নিরীক্ষা প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এ সময়ে সবচেয়ে বেশি আয় হয়েছে উড়োজাহাজ ল্যান্ডিং ও পার্কিং খাতে। আয়ের পরিমাণ ৯৮১ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরে এ খাত থেকে আয় হয়েছিল ৫২৩ কোটি টাকা। 

সব মিলিয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরে বেবিচকের রাজস্ব আয় হয়েছে ৩ হাজার ৫২ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা। দেশের তিনটি আন্তর্জাতিক ও সাতটি অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর থেকে এ রাজস্ব আয় করেছে বেবিচক। তবে দেশের আকাশ পরিবহন খাত ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকেন্দ্রিক হওয়ায় আয়ে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রয়েছে এ বিমানবন্দরের। 

বেবিচকের আয়ের বড় খাত উড়োজাহাজগুলোর বিমানবন্দর ব্যবহার। কোনো উড়োজাহাজ বিমানবন্দর ব্যবহার করলে সেগুলো থেকে ল্যান্ডিং ফি আদায় করে সংস্থাটি। পার্কিং বাবদও অর্থ পায় বেবিচক। আয়ের আরেকটি বড় খাত রুট নেভিগেশন। বাংলাদেশের আকাশসীমা ব্যবহার করা বিমানগুলো থেকে অর্থ আদায় করে সংস্থাটি। উড়োজাহাজের ওজনভেদে রুট নেভিগেশন ফি নির্ধারণ করা আছে। আন্তর্জাতিক রুটে উড়োজাহাজের জন্য সর্বোচ্চ ৪৫০ ডলার ফি আদায় করা হয়। আর আন্তর্জাতিক রুটের উড়োজাহাজের সর্বনিম্ন রুট নেভিগেশন ফি ১২ ডলার। অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ রুটে উড়োজাহাজের সর্বোচ্চ রুট নেভিগেশন ফি ৩ হাজার ৭৫০ ও সর্বনিম্ন ফি ৭৫ টাকা। এর বাইরে বিমানবন্দর ব্যবহার ফি, বিমানবন্দর উন্নয়ন ফি, যাত্রী নিরাপত্তা ফি, কার পার্কিং, পাইলট লাইসেন্স ফি, কার্গো স্ক্যানিং চার্জসহ বিভিন্ন খাত থেকে পাওয়া অর্থ বেবিচকের আয়ের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। 

গত অর্থবছরে রুট নেভিগেশন খাত থেকে ৩৮৭ কোটি টাকা, বিমানবন্দর ব্যবহার খাতে ২৬২ কোটি, কার্গো স্ক্যানিং চার্জ খাতে ১০৩ কোটি, বিমানবন্দর উন্নয়ন খাতে ৫১২ কোটি, যাত্রী নিরাপত্তা খাত থেকে ৫১০ কোটি টাকা আয় করেছে বেবিচক। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বেবিচক যত আয় করেছে তা থেকে পরিচালন ব্যয় বাদ দিয়ে সংস্থাটির নিট মুনাফা হয়েছে ১ হাজার ৯৬৩ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে মুনাফা করেছিল ৯৫১ কোটি টাকা। 

গত অর্থবছরের রাজস্ব আয় সম্পর্কে জানতে চাইলে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করেছি কীভাবে রাজস্ব বাড়ানো যায়। যেসব জায়গায় আয় বাড়ানোর সুযোগ আছে, সেগুলোয় যথাযথভাবে আমরা কাজ করেছি। বকেয়া অর্থ আদায় করেছি। এয়ারলাইনসের সংখ্যা বাড়িয়েছি। আগে যেখানে সর্বোচ্চ ৮০ লাখ যাত্রী হতো, সেখানে যাত্রীর সংখ্যা ১ কোটি ১০ লাখ ছাড়িয়েছে। এসব বিষয় বেবিচকের রাজস্ব আয় বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রেখেছে। ভবিষ্যতে রাজস্ব কীভাবে আরো বাড়ানো যায়, সে চেষ্টা আমরা অব্যাহত রেখেছি।’ 

টার্মিনাল-৩ চালুর পর রাজস্ব আয় আরো বাড়বে উল্লেখ করে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, ‘টার্মিনাল-৩ বিদেশী ঋণ নিয়ে করা হয়েছে। আয় না বাড়লে তো এ ঋণ পরিশোধ করা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে যাবে। আশা করি রাজস্ব আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে আমরা ঋণ পরিশোধ করব এবং নতুন আরো অবকাঠামো গড়ে তুলতে সক্ষম হব।’ 

প্রসঙ্গত, গত এক দশকে বেবিচকের রাজস্ব আয়ের বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধি ১৫ শতাংশের কাছাকাছি ছিল। তবে ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থবছরে বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে পুরো বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের এভিয়েশন খাতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তবে বেবিচকের কর্মকর্তারা বলছেন, সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারণে দ্রুত ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের আকাশ পরিবহন খাত।